নব-রামায়ণ - মণীশ রায়চৌধুরী



কথায় বলে, "সাতকাণ্ড রামায়ণ পড়ে সীতা রামের মাসি"।

যাক, এখন থেকে সীতার আর রামের শুধু মাসি কেন, কাকি, মামি, পিসি, জ্যেঠি কিছু হতেই আর বাধা থাকলনা।

কারণ ত্রিপুরার "মূর্খমন্ত্রী" বিপ্লব দেব বলেই দিয়েছেন ধনুর্ধর অর্জুন সীতাকে বিয়ে করেছিলেন। 


বিপ্লব দেব হিন্দুধর্মের ইজারা নেওয়া "জাতীয়তাবাদী" দলের অন্যতম নেতা। 

তিনি যখন বলেছেন তখন সীতা অর্জুন কে বিয়ে করতে বাধ্য।

আশা করছি তার দল তার এই অসাধারণ পান্ডিত্যর মর্যাদা দিয়ে দ্রুত রামায়ণ লেখায় হাত দেবেন। 


মুশকিল হল তাতে সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না।

কারণ মহাকাব্য তো আর সংসদীয় রাজনীতি নয়। অতএব তার দলের চাণক্য অমিত শাহ ঘোড়া কেনাবেচার মত অন্য দলের বিধায়কদের চার্টার্ড প্লেনে উড়িয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে রেখে (অবশ্যই এই বিপুল ব্যয়ের পুরোটাই জাতীয়তাবাদী সাদা টাকায় করে থাকেন) যেভাবে বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষমতা দখল করেন সেই কৌশল এখানে অচল।

মহাভারতের অর্জুন কে হাইজ্যাক করে রামায়ণে ঢুকিয়ে দিলে বিস্তর গোলযোগ শুরু হবে।


বাল্মিকী এবং ব্যাসদেব সাধুসন্ত তারা হয়তো কোর্টে যাবেন না।

কিন্তু লক্ষ্মণ, হনুমান, রাবণ, দুর্যোধন, ভীম, কর্ণ প্রভৃতিদের মাথা অত্যন্ত গরম।

তারা ছেড়ে কথা বলবেন না।

লক্ষ্মণ তার দাদা এবং হনুমান তার প্রভুকে কিছুতেই বেহাত করতে চাইবেননা।

রাবণ অভিযোগ করতেই পারেন রামায়ণে রামের সাথে যুদ্ধ করতে হয় এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে যুদ্ধে নামিয়ে নির্বংশ করা হয়েছে। 

এখন আবার তারপক্ষে মহারথী অর্জুনের সাথে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়।

তার অবস্থা এখন ডিমানিটাইজেশন পরবর্তী ভারতীয় অর্থনীতির থেকেও খারাপ। 


ভীম আবার ভাবছে অর্জুন কে রামায়ণে সরিয়ে দিয়ে পান্ডবদের দুর্বল করে দেওয়ার পেছনে শকুনির মাথাই কাজ করছে।

তিনি তাই সকাল সকাল গদা নিয়ে শকুনিকেই খুঁজতে বেরিয়েছেন। 

তিনি তো আর জানেননা যে আধুনিক ডিজিটাল ইন্ডিয়াতে জাতীয়তাবাদের মুখোশ পরা বহু শকুনি ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

কর্ণ ওদিকে গজগজ করছে।

অর্জুন কে বধ করে নিজ শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্যই সে সারাজীবন নিষ্ঠা সহকারে ধনুর্বিদ্যা শিক্ষা করেছে। 

এখন অর্জুনকেই পাচার করে দিলে তার জন্মই বৃথা হয়ে যায়।

দুর্যোধনের কোনকালেই নিজস্ব বুদ্ধি ছিলনা।

অর্জুনের বদলে রাম কে পান্ডব শিবিরে দেওয়া হলে লাভ হবে না ক্ষতি সে বুঝতে পারছেনা। 

অথচ তার বুদ্ধিদাতা মামাশ্রীকে ত্রিসীমানায় দেখা যাচ্ছেনা। 

ভীম তাকে খুঁজছে শুনেই সে আচ্ছে দিনের মত লুকিয়ে পড়েছে, ফেরত আসার নামটি করছেনা। 

মন্দলোকে তো এমনও বলছে ধর্মজ্ঞ যুধিষ্ঠির পর্যন্ত অর্জুনের বদলে অন্তত যাতে রামকে তার টিমে দেওয়া হয় তার চেষ্টায় লেগে পড়েছেন।


সমস্যা কিন্তু এখানেই থেমে নেই।

বিজেপির ভক্তগণ এতদিন রামমন্দির বানাবে বলে খুব লাফাচ্ছিল।

তারাও বুঝতে পারছেনা মন্দিরে সীতার সাথে রাম না অর্জুন কার মূর্তি থাকবে?

কে নাকি আবার আইটিসেল কে নির্দেশ দিয়েছে ফটোশপ করে সব জায়গায় রামের বদলে অর্জুনের ছবি বসাতে হবে।


মোদ্দাকথা অবস্থা এখন ভূশণ্ডির মাঠ বা হযবরল-এর অন্তিম দৃশ্যর থেকেও গুরুতর। 

এখন প্রবীণ তোগাড়িয়া বা মোহন ভাগবত যদি ঝটপট নতুন রামায়ণ আর মহাভারত লিখে দেন তবেই হিন্দুধর্ম রক্ষা পায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ