রাজনীতির খেলা - মণীশ রায়চৌধুরী

 


প্রকৃত খেলোয়াড় তো সে যে বিপক্ষকে নিজের উপযুক্ত পরিবেশে খেলতে বাধ্য করে।

বিজেপি এইখানেই বারবার জিতে যাচ্ছে, কারণ তার প্রতিপক্ষরা সবাই অপদার্থ বললেও কম বলা হয়।

রাজনীতির খেলায় জয় বলতে শুধু পাঁচ বছর শেষে একবার ভোটে জেতা বোঝায়না।

আসল হচ্ছে মতাদর্শগত জয়।

সেইখানে জিততে পারলে ভোটের লড়াই নিয়ে ভাবার বিশেষ দরকার পড়েনা।

নিশ্চিত জানুন অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাই জিতবে।


আচ্ছা, বিজেপির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পরিবেশ কী? তারা কি নিয়ে আলোচনা করতে সবচেয়ে ভালবাসে? 

বিজেপি সবচেয়ে ভালবাসে ধর্মের রাজনীতি করতে, হিন্দু মুসলিম বিভাজন ঘটিয়ে ফ্যাসিবাদী হিন্দু রাষ্ট্রের গঠন করাই লক্ষ্য।

তার সাথে সুকৌশলে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি মানেই বৈদিক সংস্কৃতি এই মিথ্যা প্রচার বারংবার করে তাদের কাজ, মতাদর্শকেই জাতীয়তাবাদ বা ভারতীয়ত্বের প্রতীক বলে জনমানসে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।


দীর্ঘদিন প্রচারের ফলে দেশের একটা বড় অংশ মনে করতে শিখেছে যে বিজেপি যেটা করছে সেটাই জাতীয়তাবাদের পরাকাষ্ঠা। 

অতএব যারা বিজেপির বিরোধী তারা আসলে দেশেরও বিরোধী। 

তাই অনেক মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষও ফেসবুকে লেখেন, "বিজেপির বিরোধিতা করছেন করুন কিন্তু দেশের বিরোধিতা করবেন না।"

এখানেই তো তাদের সবচেয়ে বড় জয়, আসল জয়।

সেদিনই পা-চাটা মিডিয়ার জনপ্রিয় অ্যাঙ্কর অঞ্জনা ওম কাশ্যপ তার শো-তে বলছিলেন "মোদি আসার পর দেশ বিরোধী সিকুলার (সেকুলারটা ওদের কাছে গালাগাল) গ্রুপ বিপদে পড়ে গেছে তাই তারা প্রধানমন্ত্রীর বদনাম করছে।

মোদিজি এসব সিকুলারিজমকে পাত্তা না দিয়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন।"

প্রচারের কল্যাণে ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেকুলারিজম যে ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম শর্ত সেটাই ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে।


তাহলে এই সামগ্রিক অপচেষ্টা বন্ধ করতে বিজেপি বিরোধী দলগুলোর কী করা উচিত ছিল? 

তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত সংজ্ঞা মেনে ঘোষণা করা উচিত ছিল ভারতে ধর্মাচরণ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যাপার। 

যতক্ষণ না আইন শৃঙখলা ভঙ্গ হচ্ছে ততক্ষণ রাষ্ট্র কোনভাবেই এতে নাক গলাবেনা।

ধর্মের জন্য কোনরূপ বিশেষ সুযোগ সুবিধা কাউকেই দেওয়া হবেনা।

মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর উপরেই নজর দেওয়া উচিত ছিল।

বারবার সেগুলোকেই তুলে ধরা দরকার ছিল।


কিন্তু তার বদলে বিরোধী দলনেতা, নেত্রীরা আরও বেশি করে ধর্মের রাজনীতিতে ঢুকে পড়লেন। 

আগে যেসব সরকার অনেক ক্ষেত্রেই মুসলিমদের, না ভুল হল মোল্লা, মুফতিদের তোষণ করেছেন। 

সেটাকে ব্যালান্স করতে সরকারি অর্থ ব্যয় করে হিন্দুদের ধর্মাচরণে অর্থসাহায্য দেওয়া শুরু হল।

রাহুল গান্ধী থেকে মমতা ব্যানার্জি কে কত বড় হিন্দু প্রমাণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। 

বিজেপি তো ঠিক সেটাই চায়।

কারণ ধর্মের রাজনীতি হচ্ছে তাদের অনুকূল পরিবেশ। 

বছরের পর বছর সেই কাজই তারা করে এসেছে। 

এইকাজে তাদের হারাতে যে পরিমাণ সংগঠিত ধর্মান্ধ অমানুষের লোক বল দরকার বিরোধীরা কিছুতেই তার অর্ধেকও পারবেনা। 

ফলে লোকের কাছে তারা দ্বিচারিতা করা ভন্ড বলে প্রমাণিত হবে।

এখানেই বিজেপির জিত।

বিরোধী দলগুলো এটা যত জলদি বুঝবে ততই মঙ্গল। 

নাহলে পরবর্তী কালে শুধু তারা হারবেন না, হারবে এই ভারতবর্ষ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ