সম্প্রতি উত্তরাখন্ডে আয়োজিত এক 'ধর্ম সংসদে' নামীদামি সব সন্ন্যাসীরা(!) হিন্দুধর্মকে রক্ষা করার জন্য উপস্থিত হয়েছিল। তা এত হাজার বছর ধরে চলে আসা হিন্দুধর্মকে হঠাৎ রক্ষা করতে হবে কেন? কারণ, এখন নাকি "হিন্দু খতরে মে হ্যায়"।
সত্যি বলছি মশাই, সত্যিই হিন্দু খতরে মে হ্যায়।
এমন খতরা মানে বিপদ হিন্দুরা সুলতানি শাসনে দেখেনি, মুঘল আমলে দেখেনি, এমনকি দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী ইংরেজদের শাসনেও দেখেছে কিনা সন্দেহ আছে।
তথাকথিত হিন্দু হৃদয় সম্রাট মোদীজি ক্ষমতায় বসেই হিন্দুদের এমন অবস্থা করে ছাড়লেন যে কিছু বলার নেই।
প্রথমেই তিনি কালোটাকা ফেরানোর ঢক্কানিনাদ করে রাতারাতি পুরনো ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করে দিলেন। দিনের পর দিন ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। লাইনে দাঁড়িয়ে যারা মারা গেল স্বাভাবিক ভাবেই তার অধিকাংশই হিন্দু। আচমকা নোট বাতিলে যেসকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে দিন আনি দিন খাই মানুষের জীবন-জীবিকা তছনছ হয়ে গেল তাদেরও অধিকাংশ হিন্দু।
এরপর NRC-CAA পর্ব শুরু হল। আসামে বিজেপি ক্ষমতা পেলে সব মুসলমানরা (বিজেপির ভাষায় দেশদ্রোহী) দেশ ছেড়ে চলে যাবে হিন্দুরা রাজার হালে থাকবে এই আশায় তারা বিজেপিকে জেতালো। কিন্তু বিজেপি হিন্দুদেরই ভোটে জিতে হিন্দুদেরই রাষ্ট্রহীন নয় বলে গরু, ছাগলের মত ডিটেনশন ক্যাম্পে ভরে দিল।
যাদের ভোটে জিতে মোদী ক্ষমতায় এলেন সেই নাগরিকদেরই এখন প্রমাণ দিতে হচ্ছে যে তারা সত্যি সত্যিই নাগরিক। বিজেপি ক্ষমতায় এলে কাশ্মীরে জমি কিনবে বলে যারা লাফাচ্ছিল সেই অসমিয়া হিন্দুরা আবিষ্কার করল নতুন নাগরিকত্ব আইনে বেনাগরিক ঘোষিত হয়ে যাদের নাম ডিটেনশন ক্যাম্পের লিস্টে উঠলো তার মধ্যে ১৩ লাখই হিন্দু।
অর্থনীতির কথা আর কিইবা বলব।
নোট বাতিল তো বললাম।
এমন জিএসটি আনলেন যে গরিব হিন্দু ব্যবসায়ীদের ব্যবসা লাটে উঠল।
বেকারত্ব এমন স্তরে নিয়ে গেলেন যে ঘরে ঘরে গরিব হিন্দু ছেলেরা চাকরি পায়না।
মূল্যবৃদ্ধি এমন হয়েছে যে অগণিত হিন্দুকে আধপেটা খেয়ে, অভুক্ত থেকে দিন কাটাতে হচ্ছে। বিজেপির "প্রধান শত্রু" পন্ডিত নেহেরু প্রধানমন্ত্রী হয়ে জরুরি খাদ্যসামগ্রীগুলিকে অত্যাবশকীয় পণ্যর তালিকায় রেখেছিলেন যাতে তা অনিয়ন্ত্রিতভাবে কালোবাজারি করে মূল্যবৃদ্ধি না হয়। মোদীজি তো হিন্দুদের নিয়ে খুবই চিন্তিত তাই তিনি খাদ্যশস্যকে সেই তালিকা থেকে বাদ দিলেন। অর্থাৎ দেশবাসীর কাছে খাদ্যের নিশ্চয়তা থাকলনা। ফলে, অবস্থা এমন হয়েছে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারত পাকিস্তান, বাংলাদেশ তো ছেড়ে দিন আফ্রিকার অনেক দেশেরও পিছনে চলে গেছে। এই যে বিপুল অভুক্ত ভারতবাসী তারও অধিকাংশ হিন্দুই হল। তাহলে হিন্দুরা তো নিশ্চয়ই বিপদে আছে।
গতবছরের অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে যে সকল পরিযায়ী শ্রমিক, দিন আনি দিন খাই মানুষ সর্বস্বান্ত হল মারা গেল তাদেরও অধিকাংশ সেই হিন্দু।
পেটে খাবার নেই, পরনে কাপড় নেই, বেকারের চাকরি নেই, রোগে ওষুধ নেই এসব তো ছিলই।
এবার তো মহান হিন্দুবীরের রাজত্বে হিন্দুদের দম আটকে মরতে হয়েছিল।
কারণ করোনা চিকিৎসায় অক্সিজেনেরও সরবরাহ ছিলনা।
কিন্তু মরেও হিন্দুরা নিষ্কৃতি পায়নি।
তারা কত আশা করেছিল হিন্দুরাষ্ট্র হবে তাদের স্বর্গসুখ লাভ হবে।
কিন্তু পরিস্থিতি এমন হল হিন্দুরীতিতে শালীনভাবে তাদের দাহকার্য পর্যন্ত হচ্ছেনা।
উত্তরপ্রদেশের হিন্দুবীর যোগীর রাজত্বে শ্মশানে ২০ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
কোথাও কোথাও তো বাড়িতে বরফ দিয়ে ফেলে রেখে দুতিনদিন পরে দাহ করতে হয়েছিল।
রাস্তায় রাস্তায় হিন্দুদের গণচিতা জ্বলছিল।
আর কি বাকি মশাই আচ্ছে দিনের???
সাধে কী বলছি মশাই, হিন্দু এবার সত্যিই খতরে মে হ্যায়।
অবশ্য যারা বলে সব হিন্দুরাই মোদীর রাজত্বে খতরা'য় ছিল তারা মশাই বিশ্বনিন্দুক।
আম্বানি, আদানি, জয় শাহ থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করে বিদেশে চলে যাওয়া মহাপুরুষেরা সবাই হিন্দু এবং তারা কিন্তু একটুও খতরাতে ছিলনা।
2 মন্তব্যসমূহ
দারুন লেখা
উত্তরমুছুনঅসম্ভব ভালো লেখা একেবারে চাবুক l
উত্তরমুছুন