গণতন্ত্রের শেষ আশা: গান্ধী



বিজেপির তরুণজ্যোতি তিওয়ারি প্রশ্ন তুলেছে মহাত্মা গান্ধীকে 'জাতির জনক' উপাধি কে দিয়েছে? 

আসলে বিজেপি মাত্রই কুশিক্ষিত, তাই জানেনা স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু তার চূড়ান্ত দেশত্যাগের পরে রেডিওবার্তায় তাকে জাতির জনক বলে সম্বোধিত করেন। 


কিন্তু, গভীরভাবে দেখলে সুভাষচন্দ্র একটা নামমাত্র। 

রবিঠাকুর একবার মহাত্মাজির সম্পর্কে যা বলেছিলেন তার মর্মার্থ হল, যখন জাতি দিশাহারা তখন ভারতে গান্ধী এলেন। তিনি মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষের সামনে তাদেরই বেশভূষা পরে দাঁড়ালেন, তাদেরকে তাদেরই  ভাষায় বুঝিয়ে সংগ্রামের জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন। তখনই দেশের মানুষ তাকে মাথার মণি করে নিয়েছিল।


মহাত্মাজিই জাতির জনক কেন এই জাতীয় প্রশ্ন যারা (তার ভিতর চাড্ডিও থাকে অতিবিপ্লবীও আছে) করে রবিঠাকুরের এই বক্তব্যই সম্ভবত তাদের সঠিক জবাব হতে পারে।

গান্ধীর কোনরকম সরকারি খেতাব বা উপাধিরই প্রয়োজন ছিলনা, আজও মৃত্যুর ৭৪ বছর পরেও নেই।  

এই ভূখণ্ডের সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষই আসলে তাকে দেশনায়কের আসনে বসিয়েছিল। এই মাটির অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েই তিনি 'জাতির জনক' উপাধির মর্যাদা রক্ষা করেছেন। 


আমরা নিজেদের বিশাল বিপ্লবী ভাবতেই পারি। বিশেষত, গান্ধীর জীবনচর্যায় যেহেতু তথাকথিত মারমার কাটকাট কোন ব্যাপার ছিলনা। কিন্তু, সত্য এটাই বর্তমান ভারতকে 'হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানে'র প্রচারক যে উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তি গ্রাস করতে চাইছে তার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ৭৪ বছর আগে খুন হওয়া এক শীর্ণকায় বৃদ্ধ যার নাম মোহনদাস করমচন্দ গান্ধী। আজও আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আমেরিকায় গিয়ে কথা শুনতে হয় যে তিনি গান্ধীর দেশের মানুষ হয়েও গণতন্ত্রের পথে চলছেননা।


বর্তমান সময়ে বিজেপি-আরএসএস তাদের সুনির্দিষ্ট মিথ্যা প্রচার এবং সুকৌশলে ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে তাদের বিরোধী শিবিরের অন্যতম প্রধানমুখদের অনেককেই প্রায় হজম করে ফেলেছে। কথাটা শুনতে আপনার খারাপ লাগতেই পারে। কিন্তু নিরপেক্ষ ভাবে ভেবে দেখুন। বিজেপি আজ মহানন্দে কমিউনিস্ট ভগৎ সিং-কে শ্রদ্ধা জানায়। মিথ্যা প্রচারে ওরা ভুলিয়ে দিতে পেরেছে যে ভগৎ সিং কমিউনিস্ট ছিল তার সাথে বিজেপির আদর্শ কোনভাবেই মেলেনা। বরং চাড্ডিছানারাই বেশি লাফিয়ে বলে গান্ধী ভগৎ সিং কে ইচ্ছে করেই বাঁচায়নি।

সুভাষচন্দ্র বা সর্দার প্যাটেলের ক্ষেত্রেও একই কথা সত্যি। লাগাতার মিথ্যা প্রচারের ফলে তারা সুভাষচন্দ্রকে গান্ধীর এবং প্যাটেলকে নেহেরুর প্রতিপক্ষরূপে জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। সুভাষচন্দ্র দেশে ফিরলে ভারতে স্বর্গরাজ্য স্থাপিত হত এবং হতচ্ছাড়া লম্পট গান্ধীর জন্যই দেশভাগ হল এইজাতীয় বালখিল্য সরলীকরণ শুধু চাড্ডি নয় অসংখ্য কট্টর বামপন্থীও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। একইভাবে নেহেরুর পরিবর্তে প্যাটেল প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে চীন, পাকিস্তান সব প্যান্টে হিসু করে দিত দেশবাসীর একটা বড় অংশ তা বিশ্বাস করে। 


কিন্তু বিজেপি, আরএসএস গোষ্ঠী শত চেষ্টা করেও যাদের হজম করে নিজের শিবিরের লোক বলে দাগিয়ে দিতে পারেনি তাদের একজন হলেন পন্ডিত নেহেরু এবং অন্যজন হলেন নেহেরু যাকে পিতার আসনে বসিয়েছিলেন সেই শীর্ণকায় বৃদ্ধ গান্ধী। ভারতে গান্ধীই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি মৃত্যুর ৭৪ বছর বাদেও যার প্রতিকৃতিতে গুলি করে তার হত্যাকে উদযাপন করে হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি গোষ্ঠী।

সাধে কি আইন্সটাইন তার সম্পর্কে বলেছিলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পক্ষে এটা বিশ্বাস করাও কষ্টকর হবে যে এরকম একজন ব্যক্তি একসময় ভারতের মাটিতে চলাফেরা করত।

এইভাবেই গান্ধী মারা গিয়েও গণতন্ত্রের শেষ আশা হিসাবে বারেবারে জিতে যান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ