পাগলের প্রলাপ

 


লিখেছেন মণীশ রায়চৌধুরী

হ্যাঁ বিজেপি বিপুল ভোটে জিতে ২০১৪ এর পরে ২০১৯-তেও গদিতে বসেছে। হয়তো সীমাহীন দুর্নীতি সত্ত্বেও ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনেও জিতে যাবে। 

ভোটে কেউ জেতে কেউ হারে।

অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রই জানেন প্রতিটা ভোটেই জয়, পরাজয়ের নানা অঙ্ক থাকে।

তা নিয়ে এখানে আলোচনা নিঃষ্প্রয়োজন।


কিন্তু তাদের এই চোখধাঁধানো জয়ে কি তাদের এতদিনের চূড়ান্ত অপশাসন, সীমাহীন দুর্নীতি মিথ্যা হয়ে যায়?

না, যায়না।

তাদের এই জয়ে মিথ্যা হয়ে যায়না যে World Hunger Index এ আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। আধার কার্ড না থাকায় চাল না পেয়ে না খেতে পেয়ে মরার লজ্জাজনক ঘটনা এই দেশেই ঘটে।

Transparency International এর রিপোর্ট অনুযায়ী আজ আমরা দুনিয়ার অন্যতম দুর্নীতিপরায়ণ দেশ।

Press Freedom Index আজ ভারতীয় মিডিয়ার ন্যাক্কারজনক ভূমিকা স্পষ্ট করে দিয়েছে। 

আজ মিডিয়া কর্পোরেট হাউসের দালাল ছাড়া আর কিছুই নয়।

Most religiously intolerant দেশের তকমাও পেতে চলেছি আমরা। ধর্ম বিষয়ে আমাদের অসহিষ্ণুতা আজ আফগানিস্তান ও আরও ঘোরতর ইসলামি অপশাসিত দেশগুলোর সাথে একাসনে বসিয়ে দিয়েছে। 

টাইমে'র মত আন্তর্জাতিক পত্রিকা আজ সরকারের প্রধান মুখ কে Divider in Chief বা ভারতে ভেদাভেদ সৃষ্টির কান্ডারী বলছে।


আপনারা তো সারাদিন ভারতমাতা কি জয় বলেন,  তবু এসব জেনেও আপনার লজ্জা হয়না।

অবশ্য আপনারা এগুলো জানেন কিনা এটাও একটা প্রশ্ন।

একজন ভারতীয় হিসাবে সারাবিশ্বের কাছে দেশের মুখ পুড়তে দেখে আমার কিন্তু লজ্জা হয়।

আমার লজ্জা হয় যখন জানতে পারি গত পাঁচ বছরে কৃষক আত্মহত্যা সর্বাধিক। 

আরও লজ্জা হয় যখন দেখি ভারতমাতার জয়গান করা কিছু ক্ষমতাসীন নেতা একে যৌন অক্ষমতা বা ফ্যাশন বলে বিবৃতি দেন।

আমার ঘৃণা হয়।

হ্যাঁ, ঘৃণা হয় যখন দেখি আদিবাসীদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের শতাব্দী প্রাচীন বাসভূমি থেকে বিতাড়িত করে সেই জঙ্গল, পাহাড়, খনি আদানি, বেদান্ত বা অন্য কোন কর্পোরেট গ্রুপকে লুঠ করার জন্য তুলে দেওয়া হয়।

আমি বুক চিতিয়ে বলতে পারিনা যে আমি গর্বিত ভারতবাসী কারণ এই দেশেই পরিবেশ দূষণের জন্য জনতা স্টারলাইট কোম্পানি বন্ধ করতে চাইলে সরকার তাদের কুকুরের মত গুলি করে মারে।


একজন প্রকৃত ভারতীয় বা আরও স্পষ্ট করে বললে একজন মানুষ হিসাবে এই নগ্ন ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনের প্রতিবাদ করা আমি কর্তব্য মনে করি।

তাই এতদিন এর বিরোধিতা করে এসেছি। 

বিজেপির পুনরায় আরও সর্বাত্মক জয়ে উপরিউক্ত সত্যের কোনটাই মিথ্যা হয়ে যায়না।

তাই সেই প্রতিবাদ এখনো একইভাবে জারি থাকবে। 

আপনারা বলবেন, "এত লোক যে এদের ভোট দিল, এরা সবাই বোকা আর আপনি একাই ভারি বুদ্ধিমান!"

আপনাদের এক পরমসত্য মনে করিয়ে দিতে চাই যে সত্য কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়না।

ইতিহাস সাক্ষী কখনো কখনো একজনের মতামতই সারা পৃথিবীর মতের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। 

তা নাহলে আজও সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরত।


বিশেষত আমরা বাঙালি, জন্মলগ্ন থেকেই গুরুদেব আমাদের কানে মন্ত্র দিয়ে দেন, "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে"।

আরেকটু বড় হতেই গুরুদেব আমাদের সযত্নে বুঝিয়ে দেন, "দেশ মানে মাটির ভূখণ্ড নয়, দেশ মানে দেশের মানুষ। তাই মানুষ অসুখী হলে বন্দেমাতরমের কাব্যকথায় দেশের লজ্জা ঘুচবেনা"।

সেই পরমগুরুই আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, দেশকে যারা মা বলে, দেবী বলে চিৎকার করে তাদের ভক্তি দেশের প্রতি নয়, তাদের ভক্তি এক মোহের প্রতি যা শুধু দেশের সর্বনাশই করতে পারে।

আমি মানবধর্মে দীক্ষিত, কারণ এটাই একমাত্র সত্য।

একজন ধার্মিক হয়ে গুরুবাক্য অমান্য করি কী করে বলুন তো???

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ