হিন্দুরাষ্ট্রের নীল নকশা - মণীশ রায়চৌধুরী

 

ধর্ম যে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য মনুষ্যত্বহীন ধর্মান্ধ দানবে পরিণত করে উদয়পুরে কানহাইয়ালালের হত্যাকাণ্ড তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।


বিজেপির পোষ্য নুপুর শর্মার কিচ্ছুটি হলনা আবার বিজেপির 'গোপন প্রেমিক' আসাদুদ্দিন ওয়েইসিরও কিছুই হলনা। কারণ তারা সমাজের উচ্চবর্গের মানুষ (!!)। সোজা ভাষায় প্রিভিলেজড এলিট ক্লাস। 

তারা দুজনেই পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে নিজ নিজ পক্ষের অনুসারীদের ধর্মরক্ষার অছিলায় উস্কে দিয়ে দূর থেকে মজা দেখলেন। 


কিন্তু মরল কে?

মরল গরিব দর্জি কানহাইয়ালাল। অর্থাৎ স্বল্পশিক্ষিত হতদরিদ্র শ্রমজীবী শ্রেণীর মানুষ। প্রকৃত শিক্ষার সুযোগ পায়নি বলেই নুপুর শর্মার প্রকৃত চরিত্র তার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি। তাই নুপুর শর্মাকে সমর্থন করে তিনি নিজ ধর্ম রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। 


কানহাইয়ালালকে মারল কারা? 

মারল দুজন ধর্মান্ধ মুসলিম। শ্রেণীগত দিক থেকে তারাও দরিদ্র এবং শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত। শিক্ষার সুযোগ পায়নি বলেই তাদের মস্তিষ্কে এতটাই সহজে ধর্মান্ধতার বিষ ঢোকানো গেছে যে একজন তাদেরই মত গরিব দর্জির মাথা কেটে তার ভিডিও বানানোর মত নারকীয় কাজে তারা রসুল তথা ইসলামের মর্যাদা খুঁজে পেয়েছে।


এই হত্যাকাণ্ডের ফল কী হবে? 

দুজন হত্যাকারীই ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে এবং তাদের বাকি জীবনটা জেলের অন্ধকার কুঠুরিতেই কেটে যাবে। 


এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে কিছু এলিট ক্লাসের রাজনীতিবিদ তাদের কর্পোরেট প্রভুদের স্বার্থসিদ্ধি করার জন্য ধর্মীয় হানাহানির  রাজনীতিকে সুচতুর ভাবে ব্যবহার করছে। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তারা নিজেদের স্বার্থেই চায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ভিতর শিক্ষার বিকাশ না হোক। অশিক্ষিত মানুষদের সহজেই ধর্মীয় গোঁড়ামির বেড়াজালে আটকে রেখে ইচ্ছামত ব্যবহার করা যায়।

যে শ্রমজীবী মানুষদের কর্পোরেট শোষণের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার কথা তারাই একে অন্যের গলা কেটে ধর্মরক্ষার প্রশান্তি লাভ করছে।

এইজন্যই দুশো বছর আগে এক দাড়িওয়ালা বৃদ্ধ বলেছিলেন যে ধর্ম হচ্ছে আফিম। আর এই আফিমের নেশার সর্বনাশা পরিণাম এটাই যে এর আসক্তি শ্রমজীবী শ্রেণীর মানুষদের এককাট্টা হতে না দিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে ভাগ করে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেয়।


লেখাটা এখানেই শেষ করা যেত। কিন্তু, তারপরেই যেসকল তথ্য তদন্তে প্রকাশিত হল তাতে ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশকে কলুষিত করার বিজেপির নীল নকশা আরও একবার প্রকাশিত হল। তদন্তে ফাঁস হয়ে গেল কানহাইয়ালালকে যারা খুন করেছে সেই ধর্মান্ধ মুসলিমরা বিজেপির মুসলিম মাইনরিটি মোর্চার সদস্য। সাধারণত বিজেপি শুনলেই আমাদের সামনে উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিকৃত চর্চা করা এক রাজনৈতিক দলের ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা উচিত আর পাঁচটা রাজনৈতিক দলের মতোই তারও সংখ্যালঘু সেল আছে।


তাহলে অঙ্কটা কি দাঁড়ালো?

এদিকে নুপুর শর্মা উস্কানিমূলক ভাষণ দিল। জবাবে মুসলিম মৌলবাদী ধর্মীয় নেতা এবং রাজনীতিবিদেরা সেটাকে লুফে নিয়ে পালটা লোক ক্ষেপালো। সাধারণ মুসলিম জনতা মূর্খের মতো তাদের কথায় নেচে রাস্তা অবরোধ ভাঙচুর করে দিয়ে সাধারণ হিন্দুদের মনেও বিতৃষ্ণা এবং ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে ফেলল।

তারপরে ভয়ের পরিবেশ আরও জাঁকিয়ে বসাতে বিজেপিরই মুসলিম মাইনরিটি মোর্চার সদস্যরা আইসিস জঙ্গিদের স্টাইলে মাথা কেটে ভিডিও বানালো।

সেই সুযোগের সদব্যবহার করে হিন্দুত্ববাদী গ্রুপ সাধারণ হিন্দুদের বোঝাতে পারল, "দেখেছ মোল্লারা কী বাড় বেড়েছে, কম আছে তাতেই হিন্দুদের মাথা কাটছে, যখন সংখ্যায় বেড়ে যাবে হিন্দুদের শেষ করে দেবে।"

ফলে আতঙ্কিত সাধারণ হিন্দু জনতা যারা বিজেপির হিন্দুত্ব নিয়ে উগ্রতাকে কোনভাবেই সমর্থন করেনা, তারাও কানহাইয়ালালের বীভৎস হত্যাকাণ্ড দেখে নিজের অজান্তেই হিন্দুরাষ্ট্রের ধারণার সাথে সহমত হতে শুরু করবেন। 

ভারতকে সাংবিধানিক ভাবে হিন্দুরাষ্ট্র গড়ে তুলতে বিজেপি এরকম অসংখ্য সুক্ষ্ম কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। আমাদের সাবধান থাকতে হবে নাহলে অচিরেই ভারতবর্ষ নামের দেশটা শেষ হয়ে যাবে এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবী হিটলার শাসনের জার্মানির সাথে একাসনে ঘৃণাভরে আমাদেরও বিচার করবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ