টাকার পাহাড় - মণীশ রায়চৌধুরী

রাজনীতি স্লোগান ছাড়া মানায়না। এই যেমন বামফ্রন্ট স্লোগান দিত, 'কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ'।
কংগ্রেসের একসময় জনপ্রিয় স্লোগান ছিল, 'জয় জওয়ান জয় কিষাণ'।
কিন্তু তৃণমূলের অলিখিত স্লোগান মনে হচ্ছে, 'চুরি আমাদের ভিত্তি, দুর্নীতিই আমাদের ভবিষ্যৎ'।

গত কয়েকদিন ধরে ইডি বাংলায় বহু জায়গায় হানা দিয়ে অকল্পনীয় পরিমাণে কালো টাকা, গয়না, বৈদেশিক মুদ্রা এবং আরও অনেক কিছু বাজেয়াপ্ত করেছে। 
গত ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ গার্ডেনরিচে ইডি'র হানায় ব্যবসায়ী আমির খানের বাড়ি থেকে পনের কোটিরও বেশি কালো টাকা উদ্ধার হতেই অযাচিতভাবে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বিবৃতি সেই কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।
ঘটনা ঘটতেই ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচিতে ইডির হানা প্রসঙ্গে মুখ খোলেন ফিরহাদ হাকিম, “কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ইডির হানার পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে। এক, আমাদের ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা। এসব করে তৃণমূলকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। যাতে তারা আর বিজেপির বিরুদ্ধে না লড়াই করে। নয়তো ব্যবসায়ীদের ভয় পাইয়ে দেওয়া। যাতে তারা বাংলায় ব্যবসা না করে ওদের রাজ্যে গিয়ে ব্যবসা করে। বাংলার অর্থনীতিকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা।”

কেউ আমাকে বুঝিয়ে দিন এরকম অদ্ভূতুড়ে বিবৃতির মানে কী?
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি'র কাজই তো হচ্ছে আয় বহির্ভূত সম্পত্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করা। এটা অন্য ব্যাপার যে বিজেপিরও এরকম অসংখ্য দুর্নীতিবাজ লোক টাকার গদিতে বসে আছে কিন্তু যেহেতু ইডি কেন্দ্র সরকার দ্বারা পরিচালিত হয় তাই মূলত সারা ভারত জুড়ে বেছে বেছে অবিজেপি রাজনৈতিক দলের নেতা বা তাদের ঘনিষ্ঠদের উপরই তদন্ত চলছে।
ভারতের রাজনীতিতে সাধারণত এটাই হয়ে থাকে। 

কিন্তু, এর মানে তো কখনো এটা হতে পারেনা যে তৃণমূলের নেতা বা তাদের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে যে তদন্ত হচ্ছে বা বিপুল পরিমাণ কালো টাকা উদ্ধার হচ্ছে তা মিথ্যা হয়ে গেল। 
তাহলে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম মুখ ফিরহাদ হাকিম এই তদন্তকে তৃণমূলকে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা বলছেন কেন? 
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তো ২১ জুলাইয়ে ধর্মতলার 'শহিদ দিবসের' সমাবেশে বলেই দিয়েছেন যে তার দল নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে সৎ লোকেদের দল। এমনকি ফিনাইলের বিজ্ঞাপনে যেমন ৯৯.৯৯% জীবাণু মারার দাবি করা হয়, ঠিক তেমনই তৃণমূলেও নাকি ৯৯.৯৯% লোক সৎ।
দলে এতবছর উচ্চপদে থাকা পার্থ চ্যাটার্জিকে (যিনি কোটি কোটি টাকা হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির অভিযোগে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন) তিনি ০.০১% জীবাণু মনে করেন কিনা সেকথা অবশ্য মাননীয়াই ভালো বলতে পারবেন। 
তাহলে এরকম সততার প্রতীক রাজনৈতিক দলের ইডির তদন্তে ভয় পাওয়ার কোন কারণ থাকতেই পারেনা।

তার পরের দাবিটা তো আরও বিভ্রান্তিকর।
তিনি বলছেন এভাবে নাকি বাংলার ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে বাংলার অর্থনীতিকে ধ্বসিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে।
বাংলায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সাথে কি অলিখিত ভাবে কালো টাকা জমানোর ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে?
তিনি কি বলতে চান তাহলে দুর্নীতি করে কালো টাকার পাহাড় গড়া ব্যবসায়ীদের ধরা যাবেনা? 
এই অলিখিত বিপুল পরিমাণ টাকা কি তবে ঘুর পথে শাসকদলের পার্টি ফান্ডে এবং সততার প্রতীক  নেতামন্ত্রীদের ব্যক্তিগত ফান্ডে যাচ্ছে?
এর ভিতর বাংলার অর্থনীতি ধ্বসে যাওয়ার প্রসঙ্গই বা এলো কোথা থেকে? 
তিনি কি বলতে চান বাংলার অর্থনীতি বেআইনি কালো টাকার উপর দাঁড়িয়ে আছে?
অবশ্য মন্দ লোকে বলছে তার আচমকা এমন 'বুকে ব্যথা' ওঠা বাংলারই অতি পরিচিত প্রবাদ মনে করিয়ে দিল, 'ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি'।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ