অ্যাসপারগাসের বৈশাখী আড্ডার বাহার

প্রতিবেদন, তনুশ্রী গুহ:- বাঙালি জানে ভালবাসতে, তেমনি জানে খেতে ও ভালবাসার সহিত খাওয়াতেও। আর সেরকমই এক উদ্যোগ নিয়ে এলো অ্যাসপারগাসের উদ্যোগে আয়োজিত "বৈশাখী আড্ডা" পি.সি.চন্দ্র গার্ডেনে।  নববর্ষের সূচনা হয়ে গেছে আগেই। আর এই নতুন বছরকে স্বাগত জানালো অ্যাসপারগাস   তাদের নতুন কিছু রন্ধন শিল্পের মাধ্যমে। তবে শুধুমাত্র নতুন বছরকে স্বাগত জানানোই নয় তার পাশাপাশি অ্যাসপারগাসের ১২ তম বর্ষপূর্তিও ছিল তাদের অন্যতম লক্ষ্য। যেটি ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে হয়েছিল | এই দুইয়ের সম্মেলনই ছিল এই অনুষ্ঠানের মূল মাত্রা। যার নাম "বৈশাখী আড্ডা"। কলকাতার পিসি চন্দ্র গার্ডেনে   অ্যাসপারগাসের আয়োজন সম্পন্ন হয় তাদের এই বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান এবং সাথে এই নববর্ষের বৈশাখী আড্ডা। নববর্ষ এবং তার ওপর বৈশাখী আড্ডা, পুরোটাই বাঙালিয়ানায় ভরপুর। খাওয়া-দাওয়ার মেনুতে যে বাঙালিয়ানা থাকবে তা বলা বাহুল্যই। খাওয়া -দাওয়ার  শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই ছিল বাঙালি আনায় পরিপূর্ণ। শুধু যে বাঙালিয়ানা ছিল এমনটাই নয় তবে যারা ভিন্ন স্বাদের খাবার পছন্দ করেন তাঁদের জন্যও যথাযথ ব্যবস্থা ছিল। আর,এই পুরোটাই খুব সুন্দরভাবে সাজিয়েছিল অ্যাসপারগাস   ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও ক্যাটারিং সার্ভিসেস |
 অনুষ্ঠানের সূচনা হয় চমকপ্রদ উপস্থাপনা দিয়ে এবং অবশ্যই এসপারগাস ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং সার্ভিসেসের নতুন কিছু মেনু নিয়ে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল: "রাজবাড়ীর মাংস"। এছাড়াও মেনুর সাথেও গ্লোবাল কুইসিনও ছিল। মেনুর মধ্যে নাগাল্যান্ড  ও আসামের কিছু পদ,  কাশ্মীরের রোগান জোশ প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া যারা গ্লোবাল কুইসিন  এর মধ্যে অক্টোপাস, সার্ক, মালবা পুডিং,  সেন্ডল, সাকসৌকা, পেজেডিল  প্রভৃতিও ছিলো উল্লেখযোগ্য। তবে এদিনের মেনুতে বাঙালি আনায় ও  ভরপুর ছিল। যেমন, শুরুতেই ছিল আম পোড়ার শরবত, গন্ধরাজ ঘোল, সফট ড্রিঙ্কস এবং কেশর দিয়ে চা। চায়ের সাথে টা হিসেবে ছিল - ফিশ বাটার ফ্রাই, চিকেন টেংরি কাবাব, মোচার চপ এবং পটেটো ওয়েজেস । মেন কোর্সের মধ্যে ছিল  - বাঙালির প্রিয় লুচি, ছোলার ডাল নারকোল দিয়ে এবং পুলভরা আলুর দম ,ভেটকির পাতুরি, পনিরের পাতুরি,  মটন  বিরিয়ানি,  চিকেন কষা,  বাসমতি রাইস,  ডাব চিংড়ি, কড়াই পনির,পটলের দোলমা |  শেষ পাতি একটু মিষ্টি না হলে চলে?  হ্যাঁ, মিষ্টির মধ্যে অবশ্যই ছিল বাঙালির প্রিয় আমের চাটনি ও মসলা পাপড় এবং নরম পাকের সন্দেশ, মালাই ফিরিনি তিরামিশু পেস্ট্রি  তেপ্পাণ্যকি  আইসক্রিম এবং অবশ্যই পান। অ্যাসপারগাস ক্যাটারিং -এর কর্ণধার প্রীতম দত্ত বলেন, তার ছোটবেলা কেটেছে কলকাতায়। তিনি আইএইচএম এর প্রাক্তনী। খুব কম বয়স থেকেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ তিনি শুরু করেন। তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল মাত্র ৫০ জন অতিথিকে আপ্যায়ন করে। সেটি ৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ জন অতিথি পর্যন্ত আপ্যায়ন করতে সক্ষম হয়েছে বিগত ১০ই ডিসেম্বর ২০১০ সালে। এবং সেই বছরই বহু বিয়ে বাড়ির উপস্থাপনাও তিনি করেন আর এটিই ছিল তাঁর  প্রথম কাজ। এমনটাই জানালেন তিনি। তাদের  সফলতার বিষয়ে তিনি বলেন যে প্রতিটা কাজেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হয় এবং ধৈর্য ধরে থাকতে হয়। কাজের  মধ্যে কখনো সাফল্য থাকে  কখনো ব্যর্থতাও থাকে,  কিন্তু,  সবকিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। নেতিবাচক কথাবার্তা থেকে আরও বেশি ইতিবাচক করে তোলার প্রেরণা তিনি পান।  আগামী দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আগামী দিনে কর্পোরেট  এবং সোশ্যাল ইভেন্টস দুই তিনি করতে চান। নতুনদের উদ্দেশ্যে জানান যে,  নিজের প্যাশনকে যখন প্রফেশনে আনতে হয় সেটাকে সর্বোচ্চ মান দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হয়। এবার আসা যাক অ্যাসপারগাস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে। যদিও এই সংস্থাটি এখন ভোজন রসিকদের অন্যতম ভরসার জায়গা  | কিন্তু,  এদের কাজ শুরু হয় একটি পশু পাখিদের মেলার মাধ্যমে। পথ চলা শুরু করেন একটি "পেট  এক্সিবিশন"  দিয়ে। যেখানে কুকুর, বিড়াল, পাখি, মাছ এবং ছোট ছোট পশু পাখিরা উপস্থিত ছিল। একটু ভিন্ন ধরনের কাজ দিয়েই এই পথচলা শুরু। শুধুমাত্র পশুপাখি ছিল তাই নয়, সেখানে পশুপাখিদের ব্যবহৃত খেলনা বা তাদের জন্য ব্যবহৃত বাগানের জিনিসপত্র, বই এবং কেউ যদি কোন পশুকে দত্তক নিতে চায় তারও ব্যবস্থা করা ছিল। ধীরে ধীরে এইভাবেই গড়ে ওঠে এই সংস্থাটি। শুরুটা হয় ২০১২ সালে। আইএইচএম এর প্রাক্তনী  মিঃ প্রীতম দত্ত এরপর শুরু করেন বিশেষ কিছু রন্ধন প্রণালী। এইভাবে পথ চলতে চলতে অবশেষে আহারে বাংলা ২০১৬ এ অংশগ্রহণ করা এবং ২০১৬ থেকে ২০১৯ অব্দি আহারে বাংলার দায়িত্বে ছিল এই সংস্থা। এবং ২০১৮ সালে তারা এর জন্য পুরস্কৃতও  হন। এছাড়া বেঙ্গল ফিস ফেস্ট  যেটি ২০১৭ থেকে ২০২০ অব্দি এনারা অর্গানাইজ করে থাকেন। মৎস্যপ্রেমীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু মৎসের রেসিপি ছিল এই মেলায়। বলাবাহুল্য এখানেও তাঁরা  মন জয় করেছিলেন।  ২০২০ এবং ২০২১ এই দু বছর করোনা এবং করোনার পরবর্তী সময়ে  এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা কিছুটা ক্ষতির মুখোমুখি হয় | কিন্তু, করোনার সময়  পেরিয়ে তাঁরা  আবার নতুন করে তাঁদের  সংস্থা চালু করেন। হায়দ্রাবাদ এবং ব্যাঙ্গালোরে  বাঙালি খাবারের  প্রচলন শুরু করেন। এই সংস্থাটি বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স এবং ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অফ ইন্ডিয়া,  হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া প্রমূখ সংস্থার দ্বারা স্বীকৃত। এছাড়া বর্তমানে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অফ ইন্ডিয়া ইন্ডিয়ার দ্বারা রেজিস্টারপ্রাপ্ত। এছাড়াও এটি আইএসও ২২০০০: ২০১৮ সার্টিফাইড কোম্পানি। 
তবে সংস্থাটি শুধুমাত্র যে রন্ধনশিল্পের জন্য বিখ্যাত তা কিন্তু নয় যে কোন অনুষ্ঠানে রান্নার সাথে কিন্তু সৌন্দর্যটাও  খুব গুরুত্বপূর্ণ | তাই সকলের বাড়ির কোন বিয়ে,  অন্নপ্রাশন বা জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকীতে খাওয়া-দাওয়ার সাথে সাথে অনুষ্ঠানের জায়গাটিও  সুন্দর করে সাজানোর দরকার, আর সেই পুরো দায়িত্বটাই  পালন করে এই সংস্থা। তাই খাওয়ার সাথে সুন্দর করে সেজে ওঠার জন্য অবশ্যই যোগাযোগ করুন  অ্যাসপারগাসের  সাথে। যোগাযোগ করা যাবে, অ্যাসপারগাসের  নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়েই। মাত্র ৬৯৫ টাকা থেকে খাওয়ার প্যাকেজ শুরু। সাথেই রয়েছে ভিন্ন স্বাদের বাহার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ